Search This Blog

Wednesday, January 2, 2019

ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য কী ছিল ?

ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য :
ঠান্ডা লড়াইয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নজরে আসে। এগুলি হল --
  1. ঠান্ডা লড়াই ছিল ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
  2. আমেরিকা ও রাশিয়া উভয়েই নিজের জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে আর্থিক, সামরিক ও অন্যান্য সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করেছিল। 
  3. ঠান্ডা লড়াইয়ের উভয় পক্ষই নিজ নিজ রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রচারে গুরুত্ব দিয়েছিল। 
  4. উভয় পক্ষই অস্ত্র তৈরিসহ সার্বিক সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়।
  5. আমেরিকা ও রাশিয়া উভয় পক্ষই সামরিক শক্তি যথেষ্ট বাড়ালেও কোন পক্ষই  প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়ায় নি। কেবল যুদ্ধের আবহ জিইয়ে রেখেছিল। 

ঠান্ডা লড়াই কী? ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের (১৯৪৫) পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ পরস্পর দুটি রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। একটি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট অন্যটি সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। এই দুই রাষ্ট্রজোট কোন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না করেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চালাতে থাকে। এই ছায়াযুদ্ধই ইতিহাসে'ঠান্ডা লড়াই' নাম পরিচিত।
মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ( Walter Lippmaan ) ১৯৪৭ সালে তাঁর The Cold War গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।
ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ঠ্য :
 'ঠান্ডা লড়াই কী' এই অংশের জন্য ৩/৪ (তিন বা চার ) নম্বর (মার্কস) থাকলে অথবা বৈশিষ্ঠ্য লিখতে বললে এখানে ক্লিক করএবং যে অংশ বের হবে তা এই পয়েন্টের নিচে জুড়ে দাও। 
ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি :
ঠান্ডা লড়াই-এর পিছনে শুধুমাত্র আদর্শগত বা অর্থনৈতিক কারণ বা ভিত্তি কাজ করেছিল এমন নয়। এর পিছনে আরও কিছু বিষয় তথা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী কার্যকর ছিল। সমগ্র কারণকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
  1. সাম্যবাদের বিরোধিতা : রাশিয়ায় স্বৈরাচারী জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্ল্ব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লবকে আমেরিকাসহ ধনতান্ত্রিক দেশগুলি সুনজরে দেখেনি। এরা বিপ্ল্বের সময়ে রাশিয়ার জারকে সাহায্যও   করেছিল। পরবর্তী সময়ে এই দেশগুলি সাম্যবাদী সরকারকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে। ফলে পশ্চিমি দেশগুলির প্রতি রাশিয়ার মনে বিরূপ ধারণা জন্মায় 
  2. হিটলারের প্রতি তোষণ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতায় বসে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স এই সময় একনায়ক হিটলারের চেয়ে সাম্যবাদী রাশিয়াকে বড় শত্রু বলে মনে করে। ফলে তারা হিটলারকে তোষণ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য।
  3. দ্বিতীয় রণাঙ্গণের প্রশ্ন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় (১৯৪১) হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করে। রাশিয়া এই সময় মিত্রশক্তির কাছে দ্বিতীয় রণাঙ্গণ খোলার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মিত্রশক্তি এবিষয়ে অযথা টালবাহানা করতে থাকে। পরে নিজশক্তিতে রাশিয়া যখন হিটলারকে প্রতিহত করে তখন মিত্রশক্তি পশ্চিম ইউরোপে হিটলারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রণাঙ্গণ খোলে। এতে মিত্রশক্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরী হয়। 
  4. ট্রুম্যান নীতি : রুজভেল্ট মারা গেলে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতি হন হ্যারি এস. ট্রুম্যান। ১৯৪৭ সালে মার্কিন কংগ্রেসের ভাষণে তিনি সাম্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করেনা। তিনি বলেন, বিশ্বের যেকোন স্থানে কোন মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কমিউনিস্ট গোষ্ঠী বা দেশের দ্বারা আক্রান্ত হলে আমেরিকা তাকে সবধরনের সাহায্য করবে। ফলে রাশিয়া তথা সাম্যবাদী দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার দূরত্ব তৈরি হয়।
  5. রুশ সম্প্রসারণ নীতি : বলশেভিক বিপ্ল্বের আগে থেকেই রাশিয়া নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে পূর্ব ইউরোপ ও বলকান অঞ্চলে সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করে। ১৯৪৫ সালে ইয়াল্টা সম্মেলনে রুশ রাষ্ট্রপতিস্ট্যালিন আমেরিকা ও ইংল্যান্ডকে এই নীতি বজায় রাখার কথা জানায়। কিন্তু ট্রুম্যান রাশিয়ার এই নীতি মানতে রাজি ছিলেন না।
  6. পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে মতভেদ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স  ও চিন  - এই পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে কিভাবে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করা হবে তা ঠিক করা। কিন্তু কাউন্সিলের প্রত্যেক অধিবেশনেই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যদের তীব্র মতবিরোধ দেখা দে।
  7. জার্মানির ক্ষতিপূরণ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী করে জার্মানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত হয় ইয়াল্টা সম্মেলনে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকা ও ইংল্যান্ড ক্ষতিপূরণ আদায়ে অনীহা দেখায়। রাশিয়ার ধারণা হয় জার্মানিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্যই ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে না।
  8. আণবিক বোমার গবেষণা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়াকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে আমেরিকা পরমাণু বোমা বানায়। এতে আমেরিকার প্রতি রাশিয়ার সন্দেহ বাড়ে। এরপর জাপানে এই বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়। 
এই সমস্ত ঘটনা পরম্পরা আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়। এই অবিশ্বাস একসময় যুদ্ধের আবহ তৈরি করে যা'ঠান্ডা যুদ্ধ' নামে পরিচিত।
    ---------------------///---------------------